ঘুরে আসুন নীলসাগর

প্রকাশঃ জুন ২৯, ২০১৫ সময়ঃ ৬:২০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ

জহির উদ্দিন মিশু

Guest-Birds_bdtravelnewsচারপাশটা ঢেউ খেলানো সবুজে ঘেরা। দেখে যে কারও মনে হবে, যেন সবুজের শাড়িতে সুসজ্জিত স্বলজ্জ বধুর মতোই। এর উদার-উচ্ছল পরিবেশ যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর উদাস মন নিমেষেই অজানা-অপ্রত্যাশিত প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিতে পারে।

নীলফামারী জেলা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা মৌজা প্রায় ৫৪ একর জমি নিয়ে অবস্থিত সুবিশাল এ জলাশয়টির নাম নীলসাগর। তৎকালীন উপ-মহাদেশের ধীরাজ রাজার সময়কালে খননকৃত ঐতিহাসিক নীলসাগর এখন চিত্তবিনোদন ও মাছ শিকারীদের অতি আকর্ষনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এর দুপাড়ে দাড়িয়ে রয়েছে নারিকেল, বনবাবুল, আকাশমণি, মেহগনি, শিশুসহ অজানা-অচেনা হরেকরকম ফুল ও ফলের সারি সারি বৃক্ষরাজি।

শীত মৌসুমে মনোহরিণী নীলসাগরে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে হাজার মাইল পেরিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে বিচিত্র সব অতিথি পাখি। রাজহাঁস, মার্গেঞ্জার, মাছরাঙা, ভুবনচিল, সবুজ চান্দি ফুটকি, বাচাল নীল ফুটকি ইত্যাদি বিচিত্র পাখি। পুরো শীতকাল জুড়েই এদের অবাধ বিচরণ নীলসাগরকে করে তোলে মুখরিত।Nilsagar-1

পর্যটকদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয় নীলসাগর রেষ্ট হাউস। চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এখানে রাত্রিযাপনও করতে পারেন। এখানে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনাসহ নানারকম খেলনা সামগ্রী ও ছোট-বড় সকলের চিত্তবিনোদনের সুব্যাবস্থা। দীঘির চারিপাশ ঘিরে প্রিয়জনের হাত ধরে হেঁটে বেড়ানোর জন্য সুপ্রশস্ত পিচঢালা পথও রয়েছে এখানে। এছাড়াও রয়েছে কনক্রিটের তৈরি ছাতা, বেঞ্চ, বিশ্রামাগার। সারা বছরই এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা লক্ষ করা যায়। পিকনিক স্পট হিসেবে ইতোমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে নীলসাগর। আপনি শৌখিন মৎস্যশিকারি হলে আপনার জন্য খুশির সংবাদ। নির্দ্বিধায় নীলসাগরের জলে মাছ শিকারে কাটিয়ে দিতে পারেন ভ্রমণের সময়। চাইলে স্নানটাও সেরে নিতে পারেন এখানে। রয়েছে শান বাঁধানো পাড়। তবে সাবধান! সাঁতার না জানলে বাহাদুরি দেখাতে যাবেন না যেন! নীলসাগরের গভীরতা কমছে কম ২০/২৫ ফিট তো হবেই!nilsagor1

যেভাবে যেতে হবে: বাসে, ট্রেনে কিংবা চাইলে প্লেনেও যেতে পারেন। আছে নীলসাগর দীঘির নামেই নামকরণকৃত ঢাকা-নীলফামারী আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’। এটি সোমবার ছাড়া প্রতিদিনই ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় নীলফামারীর উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ভাড়া শোভন চেয়ার মাত্র ২২০ টাকা। বাসে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে নাবিল পরিবহন, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, বাবলু, নাদের পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস সার্ভিস আছে নীলফামারী পর্যন্ত। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫২০ টাকা। নীলফামারী শহর থেকে বাস, অটোবাইক, রিক্সা, ভ্যান কিংবা যে কোন পরিবহনেই আঁকাবাঁকা পথ ধরে পৌঁছে যেতে পারেন নীলসাগর।

জনশ্রুতি আছে, ঐতিহাসিক বৈদিক রাজা বিরাট নির্বাসিত পাণ্ডবদের তৃষ্ণা মেটাতে এ বিরাট দীঘিটি খনন করিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন, বিরাট রাজার বিশাল গরুর পালের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে এটি খনন করা হয়েছিল এবং তিনি রাজকন্যা বিন্না’র নামে এর নামকরন করেন বিন্না দীঘি। পরবর্তীতে ১৯৭৮-৭৯ সালে নীলফামারীর তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক ও অবসর প্রাপ্ত সচিব এম.এ জববার নীলফামারীর নামানুসারে বিন্নাদীঘির নামকরণ করেন ‘নীলসাগর’।

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G